skip to content
Monday, July 1, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: ছোট লালবাড়ি

চতুর্থ স্তম্ভ: ছোট লালবাড়ি

Follow Us :

সবকিছুই প্রায় প্রত্যাশামতই বাঁধা গতে চলেছে, ছোট লালবাড়ির নির্বাচনে যা যা হয়েছে, তার মধ্যে খবর এটুকুই যে বামেরা বিজেপির থেকে ৩/৪% বেশি ভোট পেয়েছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু নতুন ছিল কী? আসুন সেটা নিয়েই আজ কিছু কথা বলা যাক, ছোট লালবাড়ির নির্বাচন।

আচ্ছা এই লালবাড়ির নির্বাচন যদি বিধানসভার নির্বাচনের সঙ্গেই হত? তাহলে টান টান উত্তেজনা থাকতো, দুটো তিনটে নয়, কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমবেশি ১৫ টা সভা করতেন, নরেন্দ্র মোদী ৭/৮ টা, অমিত শাহ সমেত যাবতীয় হ্যাঁ হ্যাঁ বলা মন্ত্রীপরিষদ, সভাপতি নাড্ডা ইত্যাদিরা মিলে আরও গোটা পঞ্চাশ, সাতে পাঁচে দাদা রুদ্রনীল এর মধ্যে ৮০% সভায় হাজির থাকতেন, গোটা ৫০ সভায় তাঁর রাজনৈতিক ভাঁড়ামো আমরা শুনতে পেতাম, অঞ্জনা, কাঞ্চনা, রিমঝিম, লামা, অনিন্দপুলকের দল আলো করে থাকত সভায় সভায়। এবং এতশতর পরে তাঁরা পেতেন ১০ টা আসন, হ্যাঁ গত বিধানসভায় পাওয়া ভোটের নিরিখে বিজেপির জুটত মাত্র ১০ টা আসন।

তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে, ববি হাকিমের মেয়রকে বলুন ইত্যাদি হয়েছে, এরপর উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানেও বোঝা গেছে বিজেপি কমছে বললে ভুল হবে হু হু করেই কমছে, পাল্লা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, সারা দেশজোড়া কৃষক আন্দোলনের সামনে ৫৬ ইঞ্চির মাথা হেঁট, এসবের পরে তারা ৩ টে আসন পেয়েছেন, ভোটের আগের ছন্নছাড়া চেহারাটা ভাবুন, দলের সাংসদ বুক ঠুকে বলছেন, দলের প্রার্থীপদ বিক্রি হয়েছে, কেবল তাই নয় সেই সাংসদ রূপা গাঙ্গুলি বলছেন, দিলীপ ঘোষ বদমাইসি না থামালে এরকমই নাকি চলবে, ভাবা যায়। পার্টি উইথ অ্যা ডিফারেন্স।

দেখেছেন নাকি, বিজেপির কুচুবুলুদের? ওই সাতে পাঁচে দাদা রুদ্রনীলকে, এই ভোটের আসরে? ১৪৪ টার বড়জোর ২৫/৩০টা আসনে বিজেপি প্রচারে নেমেছিল। পেয়েছে ৩ টে, প্রচুর পেয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে আব্বাস সাব্বাস, কংগ্রেস আর বামেদের জোট হয়েছিল, সংযুক্ত মোর্চা। আমাদের হাতেই থাকবে সরকার তৈরির চাবিকাঠি, ভোটের পর চাইলেও আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করবো না, ইত্যাদি বলার পরে সবেধন নীলমণি আই এস এফ এর একজন বিধায়ক। ভোট শেষ, জোটের ভূত নেমেছে, ভাইজান ঠিক না বেঠিক জানি না, তবে তিনি এ নির্বাচনে ছিলেন না, নেড়া কবার আর বেলতলায় যায়?

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: ছোট লালবাড়ির নির্বাচন

বাম কং জোটও হয় নি। কং এর কোর ভোট কলকাতায় কিছুই নেই, আছে কয়েকজন নেতা আর কয়েকটা পকেট, তারমধ্যে দুটো তাঁরা জিতেছেন, ১৬ টাতে দ্বিতীয় হয়েছেন, ইদানিং কালের মধ্যে তাদের সবথেকে ভাল রেজাল্ট। ওদিকে বামেরাও ২ টো আসন পেয়েছেন, তাঁদের মানুষের এক অংশের সমর্থন ছিল, যে জায়গায় সংগঠনকে দাঁড় করাতে পেরেছেন, যেখানে রেড ভলান্টিয়াররা কাজ করেছিল, ছাত্র যুবদের একটা বড় অংশ যেখানে কাজ করেছে, সেখানে তারাই উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে, ৬৫ টা আসনে দ্বিতীয় তারা। বিজেপির প্রভাব বেড়ে তো ছিলই, কিন্তু কমসম করে ১০০টা আসনে বিরোধী আসনে থাকার  স্বপ্ন তারা দেখেছিল, সে স্বপ্নে গ্যামাক্সিন ঢেলে, মাত্র ৪৮টাতে তাঁরা দ্বিতীয় হয়েছেন। যে বিজেপি, ২০১৫র লালবাড়ির নির্বাচনে ৭ টা আসন পেয়েছিল, যারা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ২২ টা আসন পেয়েছিল, ২০২০র বিধানসভার নির্বাচনের হিসেবে ১০টা আসন পেয়েছিল, তারা এবার ৩ টে। ভোট শতাংশ? তৃণমূল কমবেশি ৭২% ভোট, বাম ১২% এর বেশি ভোট, বিজেপি ৯% এর কম ভোট, কংগ্রেস ৫% এর মত ভোট পেয়েছেন। বিধানসভায় অমন জয়ের পরে, এই রেজাল্ট এ চমক বলতে ওই বামেদের কিছুটা এগিয়ে যাওয়া, এছাড়া সবটাই খুব প্রত্যাশিত।

এবার আসুন, তারচেয়েও প্রত্যাশিত ফলাফল পরবর্তী বিভিন্ন দলের নেতাদের রিঅ্যাকশন, বিরাট রিগিং করে তৃণমূল জিতেছে, ভোট হয়নি, প্রহসন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভোটের দিনে যে কয়েকটা ওয়ার্ড-এ বিভিন্ন ধরণের হাঙ্গামা হয়েছে, সে তালিকার সবচেয়ে ওপরে ছিল ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড, মারপিট, বোমাবাজি, অ্যারেস্ট এসব কিছুই হয়েছে, এবং এত কিছু হবার পরে সেখানে কংগ্রসের সন্তোষ পাঠক অনায়াসে জিতেছেন, ওধারে ২২ নম্বর ওয়ার্ড, সেখান থেকেও এসেছিল বিভিন্ন অভিযোগ, এমনকি বিজেপির প্রার্থী মীনা দেবী পুরোহিতকে ধাক্কা দেওয়ার, শাড়ি কাপড় ধরে টান দেবার অভিযোগও এসেছিল, তিনি ভাল ভোটেই জিতেছেন। ১৪৪ টার মধ্যে ১৭ টা বুথের, বিভিন্ন অভিযোগের লিস্ট নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বামেরা, সেই বাম এবার ৬৫ টাতে দ্বিতীয়, বিজেপি নয়।

সুজন চক্রবর্তীর বাইট শুনলাম, ক্যামেরার সামনে তিনি এখনও বলেই চলেছেন, তৃণমূল আর বিজেপির গোপন আঁতাতের গোপন কথা, সেই এক বিজেমূলের তত্ত্ব যা মানুষ খারিজ করেছে অনেক আগেই, হাস্যকর সেই তত্ত্ব তিনি নিজেও মানেন বলে মনে হয় না, কিন্তু বলেন। তো সেসব বলার পর কমরেড সুজন চক্রবর্তী বললেন, যদি সত্যি সত্যি অবাধ ভোট হত, তাহলে তৃণমূলের কপালে দুঃখ ছিল, বললেন এ কথা। আসলে ঘটি হারালে এরকমই হয়, যে কথা বললেন, তা শুনে মানুষ হাসবেন না? তার চেয়ে ঢের বিবেচক কথা বললেন হেরে যাওয়া সিপিএম প্রার্থী চয়ন ভট্টাচার্য বললেন, ‘মানুষের ভোটে আগে জিতেছি, এবার হেরেছি, কারণ খুঁজতে হবে। কিন্তু বামেরা বাড়ছে, এটা তো ঘটনা।’ এটাই তো বলা উচিত, বামেরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে? না এক্কেবারে নয়। ১২% ভোটকে ঘুরে দাঁড়ানো বলে না, কিন্তু এও তো এক শুরুয়াত, বিজেপি যে জমি দখল করেছিল, যে বিরোধী পরিসর দখল করেছিল, তা তো আসতেই পারে বামেদের কাছে, কিন্তু তারজন্য কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন নেতাদের দরকার, যে নেতারা কথায় কথায় লোক হাসাবেন না, সুজন সেলিমদের মত বাম নেতারা বিদেয় নিলে, বামেদের ঘুরে দাঁড়াতে সুবিধে হবে, এটা তো বলাই যায়।

তো ভোট শেষ, ফলাফল হাতে, এর প্রভাব কী হতে চলেছে? স্বপ্নের ফানুশ ফুটো হয়েছে বিজেপির, কারণ তাঁদের স্বপ্নের ভিত্তি ছিল না, র্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল, কর্মী বাহিনী আরও দুর্বল হবে, আরও নেতা দল ছাড়বেন লাইন দিয়ে, খোকা শুভেন্দু আরও অকেলা মহসুস করবেন কদিন পর থেকেই, হলপ করে একথা বলতে পারি।

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ: সংসদ…সংসদীয় গণতন্ত্র

কলকাতা পুরসভা নির্বাচন আগামী মিউনিসিপালিটি, কর্পোরেশন নির্বাচনের সুর বেঁধে দিল, মিলিয়ে নেবেন, রাজ্যের আগামী পুর ও পৌর নির্বাচনের ফলাফল একই হবে, হতে চলেছে, হ্যাঁ উত্তর বঙ্গেও, সেখানকার ফানুশ ও ফাটবে। বিজেপি কমতে থাকলেই, আবার বামেরা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে, যদি তাঁরা প্রকৃত অর্থে বাম হয়ে উঠতে পারেন, কেবল কৌশল নয়, আদর্শগতভাবে বামপন্থার চর্চা করেন তাহলে আগামী বিরোধী পরিসর, তার নেতৃত্ব নিশ্চিতভাবে বামেদের হাতেই থাকবে, কংগ্রেস তার পকেটের দিকে নজর দিতেই পারে, খুব ভালো কিছু তাদের হবে বলে মনে হয় না, তাদের রাজনীতি আর সমর্থন ভিত্তির পুরোটাই এখন তৃণমূলের দখলে, কাজেই তাঁরা বরং জাতীয় রাজনীতিতে মন দিন।

এবং তৃণমূল, মাথায় রাখতেই হবে বৃদ্ধিরও এক সমস্যা আছে, ১৬/১৮ বছরের মধ্যে তৃণমূল এক চূড়ান্ত বৃদ্ধি অর্জন করেছে, সেই বৃদ্ধি বহুরোগের জন্ম দেয়, আত্মম্ভরিতা, অহং, নানাবিধ দুর্নীতি অনেক কিছু লেগে থাকে এই বৃদ্ধির সঙ্গে। ক্যান্সারের মত গোপনে বাসা বাঁধে, তারপর হঠাৎ ধস নামে। তৃণমূল নেতৃত্বকে, একথা প্রতি মূহুর্তে মাথায় রাখতে হবে।

এবার আর এক বিষয়, মেয়র কে হবে? শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের পর কিছুটা কাজ সামাল দিতেই আনা হয়েছিল ববি হাকিমকে, অনেককে অবাক করে দিয়ে ববি হাকিম কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করেছেন, কেবল তাই নয়, ববি হাকিম তৃণমূলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ, যে সমর্থন তৃণমূলের অন্যতম ভিত্তি, কাজেই দেশের সার্বিক রাজনীতি,আগামী পুরনির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মেয়র পরিবর্তন করবেন না, অন্তত আরেকটা টার্ম ববি হাকিমই মেয়র থাকছেন, আর নগর কলকাতার মাথায় থাকনা একজন মানুষ যিনি দুর্গাপূজো, ইদ আর ক্রিসমাস অনায়াসে পালন করতে পারেন, করেন।
তবে চমক আসবে মেয়র পারিষদে, তৃণমূল এই সুযোগে এক ঝাঁক যৌবন হাজির করেছেন লালবাড়ির রাজনীতিতে, তাদের কিছু দায়িত্ব দেওয়া হবে, ১৬ টা বরোর সবকটাই তৃণমূলের কাজেই সেখানেও পাওয়া যাবে তাদের, সব মিলিয়ে তৃণমূলের দ্বিতীয় জেনারেশনের প্রশাসনিক কাজের ট্রেনিং শুরু হয়ে গ্যালো, যে ভুলটা বামেরা করেছিল, সে ভুল কিন্তু তৃণমূল সযত্নে এড়িয়ে গেল।   

আরও পড়ুন: চতুর্থ স্তম্ভ : ধান কাটি, কাটি ধান, ধান কাটি

RELATED ARTICLES

Most Popular